এআইপি সন্মাননা পেলেন পরিবেশবিদ মতিন সৈকত
পরিবেশবিদ মতিন সৈকত এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন এআইপি সন্মাননা পেলেন। এটি তার পঞ্চম রাষ্ট্রীয় স্বকৃীতি ৭ জুলাই রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন এআইপি সন্মাননা প্রদান করা হয়। এসময়ে পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকতের হাতে এআইপি কার্ড, প্রশংসাপত্র, ক্রেষ্ট তুলে দেন প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ এমপি, বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
২০১৯ সালের নীতিমালা অনুযায়ী এআইপি’গণ সিআইপি’দের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে- মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ, বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার, ব্যবসা/দাফতরিক কাজে বিদেশে ভ্রমণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা প্রাপ্তির নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে উদ্দেশ্য করে Letter of Introduction ইস্যু করবে, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা পাবেন। ২০২১ সালের এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন এআইপি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষি পরিবেশ সমাজ উন্নয়ন সংগঠক, অধ্যাপক এম এ মতিন (মতিন সৈকত)। তিনি প্রায় চার দশক ধরে কৃষি পরিবেশ সমাজ উন্নয়নে বৈপ্লবিক অবদান রাখছেন। কৃষি উদ্ভাবন জাত/প্রযুক্তি বিভাগে মতিন সৈকত-কে এআইপি সন্মানা দেওয়া হয়। মতিন সৈকত একজন বহুমুখী সৃজনশীল উদ্ভাবক-উদ্যোক্তা। সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৭ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন পত্র পেয়েছেন।
মতিন সৈকত চারবার জাতীয় পুরস্কার ও পদকে সন্মানিত হয়েছেন। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ব্যাবহার এবং সম্প্রসারণে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ এবং ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মতিন সৈকত-কে দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাক্তিগত ক্যাটাগরিতে ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক প্রদান করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে তিনি ছয়বার সরকারিভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে শীর্ষ স্থান অর্জন করেন। বিষমুক্ত ফসল, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে মতিন সৈকত নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সমবায় ভিত্তিতে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে যৌথভাবে গড়ে তুলেন আপুসি, আপুবি, বিসমিল্লাহ মৎস্য চাষ প্রকল্প। প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষে দাউদকান্দি মডেল এবং নিরাপদ খাদ্য উপজেলা দাউদকান্দি মডেলের অন্যতম অংশীজন তিনি। সারাদেশে বোরোধান উৎপাদন করতে সেচের পানির জন্য কৃষককে যখন ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা বিঘাপ্রতি সেচ খরচ দিতে হয়। সেখানে মতিন সৈকত বিঘাপ্রতি এককালীন মৌসুমব্যাপী মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে ত্রিশ বছর যাবত বোরোধান লাগানো থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত যার যতোবার সেচের পানির প্রয়োজ, ততোবারই সেচের পানি সরবরাহ করে জাতীয় দৃষ্টান্ত স্হাপন করেন। একই জমিতে ধান উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষ করে বিঘাপ্রতি ১০/ ১২ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছেন কৃষক।
মতিন সৈকতের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে সরকার কালাডুমুর নদী পূনঃখনন করে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি খিরাই নদী, মাইথারকান্দি খাল, টামটা-বিটমান খাল, সুন্দলপুর খাল পূনঃখননে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। মতিন সৈকত খাল-নদী পূনঃখনন, জলাভূমি সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী, পাখি প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছেন। তার উদ্ধারকৃত পাখির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। মতিন সৈকতের বাবা মোঃ কেরামত আলী ছিলেন একজন প্রখ্যাত সমাজ সেবক। মা সাহানারা বেগমের অবদানও ছিল অসাধারণ। স্ত্রী শিরিন আক্তার, মেয়ে রুবাইয়াত সিলমী জান্নাত, ছেলে ফায়সাল সাকির তার কাজে সহযোগী। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয় ‘তিনি নিজ এলাকা দাউদকান্দি কুমিল্লায় ২০০৬ সালে ১০,০০০ কৃষক নিয়ে আইপিএম-আইসিএম ক্লাব গঠন করেন। তার এ উদ্যোগের ফলে ২০১৭ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দাউদকান্দি উপজেলাকে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১০ ও ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক এবং ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক পেয়েছেন।